চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা/chia seeds benefits in bengali
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা/chia seeds benefits in |
Read More>>শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়
চিয়া সিডঃ-
বর্তমানে মানুষের শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বেধে আছে। তাই খাবারের ব্যাপারে বর্তমানে মানুষ অনেক সচেতন। কি খাবার খেলে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, ক্যালসিয়াম এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর থাকবে ।তাই নতুন খাবারে মনোযোগ সবার বেশি। বিভিন্ন গবেষণা দেখা যায় যে ডিম, দুধ এর চেয়ে চিয়া সিড এ অধিক মাত্রায় প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। যা মানব দেহের জন্য খুবই প্রয়োজন। এটি খাওয়ার প্রচলন প্রাচীন যুগ থেকেই আছে। তাই চিয়া সিডকে স্বাস্থ্যের ভাষায় সুপার ফুড বলা হয়। তাই স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের খাদ্য তালিকায় বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এই চিয়া সিড।
চিয়া সিড কি ?
চিয়া সিড এক ধরনের মরুভূমিতে জন্মানো গাছের বীজ। এটি মরুভূমিতেই বেশি জন্মায় । চিয়া সিড শস্য জাতীয় উদ্ভিদ হিসেবে গণ্য। চিয়া সিড তিলের মতো দেখতে। এটি আমেরিকায় বেশি পাওয়া যায়। চিয়া সিড আকারে অনেক ছোট কিন্তু এর গুনাবলী অনেক বেশি। চিয়া সিড এ আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-3, প্রোটিন , ফাইবার এবং ফ্যাটি এসিড রয়েছে। তাই চিয়া সিড আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকার।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা/chia seeds benefits in bengali |
Read More>>মুখের কালো দাগ দূর করার উপায়
চিয়া সিডএর পুষ্টিগুণঃ-
পৃথিবীতে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ যে সকল শস্যদানা আছে তার ভেতরে অন্যতম একটি জায়গা জুড়ে আছে চিয়া সিড ।এটি দেখতে খুবই ছোট কিন্তু পুষ্টিগুণ ভরা। গবেষক থেকে শুরু করে পুষ্টিবিদদের নজর কেড়েছে চিয়া সিড । চিয়া সিড একটি শক্তিশালী পুষ্টির বীজ যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, ওমেগা-3ফ্যাটি এসিড, প্রোটিন , অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ সমৃদ্ধ। না দেখলেই নয় ১০০ গ্রাম চিয়া সিডএ কি পরিমান পুষ্টিগুণ রয়েছে । বোঝার সুবিধার্থে চিয়া সিডএর পুষ্টিগুণ নিচে দেওয়া হলো।
১) কার্বোহাইডেটঃ ৪২ গ্রাম।
২) ফাইবারঃ ৩৪.৪ গ্রাম।
৩) ক্যালরিঃ ৪৮৬ কিলো ক্যালরি।
৪) ভিটামিন বি ৩(নিয়াসিন): ৮.৮ মিলিগ্রাম ।
৫) ভিটামিন বি ১(থায়ামিন): ০.৬২ মিলিগ্রাম ।
৬) জিঙ্ক: ৪.৬ মিলিগ্রাম ।
৭) চর্বি: ৩০.৭ গ্রাম (এর বেশিরভাগ চর্বি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী)।
৮) পটাসিয়াম: ৪০৭ মিলিগ্রাম ।
৯)প্রোটিনঃ ১৬.৫ গ্রাম ।
১০) ফসফরাস: ৪৮০ মিলিগ্রাম ।
১১) ম্যাগনেসিয়াম: ৩৩৫ মিলিগ্রাম ।
১২) আয়রন: ৭.৭ মিলিগ্রাম ।
১৩) ক্যালসিয়াম: ৬৩১ মিলিগ্রাম ।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা/chia seeds benefits in bengali |
Read More>>খুব তাড়াতাড়ি চিকন হওয়ার উপায়
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়মঃ-
চিয়া সিডের আলাদা কোন স্বাদ নেই তাই এটি খুব সহজেই যে কোন কিছুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায় যেমনঃ সালাদ কিংবা শরবতের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। চিয়া সিডের ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য কিছুক্ষণের জন্য
পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। চিয়া সিড খেলে খুব দ্রুত ওজন কমে যায়। ওজন কমানোর জন্য এক গ্লাস পানির ভিতরে দুই চামচ চিয়া সিড এবং একটু লেবুর রস মিক্স করে খালি পেটে পান করলে খুব দ্রুত ওজন কমে যায়। ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য সকালে খালি পেটে এবং রাতে ঘুমানোর আগে দুইবার পান করতে পারি।
জ্যামঃ- আমরা বাসায় কিছু ফল, মধু ওচ জেলি তৈরি করতে পারি। সকালের নাস্তায় আমরা রুটির সাথে জ্যাম খেলে এতে বেশ ভালো ফলাফল পাওয়া যায়
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা/chia seeds benefits in bengali |
Read More>>নাকের কালো দাগ দূর করার উপায়
সালাদঃ- শসা , কাঁচা মরিচ, পিঁয়াজ, গাজর, টমেটো এবং ক্যাপসিকাম দিয়ে সালাদ তৈরি করে খাওয়ার সময় আমরা চিয়া সিড মিশিয়ে নিতে পারি এতে করে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা/chia seeds benefits in bengali |
লেবুঃ- লেবুর শরবতের সাথে আমরা চিয়া সিড মিশিয়ে শরবত খেতে পারি এতে আমাদের ওজন কমতে সহায়তা করে। এভাবে চিয়া সিড খেলে বেশ ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা/chia seeds benefits in bengali |
Read More>>ঘাড় ব্যথার কারণ ও প্রতিকার
অ্যালোভেরাঃ- এক গ্লাস পানির ভিতরে এলোভেরা এবং চিয়া সিড মিশিয়ে শরবত খেলে বেশ ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা/chia seeds benefits in bengali |
ইসবগুলের ভুষিঃ- ইসবগুলের ভুষির সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে আমরা শরবত খেতে পারি। এতে বেশ ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা/chia seeds benefits in bengali |
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা/chia seeds benefits in bengali |
পুডিংঃ- পুডিং এর সাথে মিশিয়ে চিয়া সিড খেতে পারি এতে বেশ ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা/chia seeds benefits in bengali |
টক দইঃ- ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য টক দই এর সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে খেতে পারি।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা/chia seeds benefits in bengali |
ওটসঃ- যেহেতু চিয়া সিড এর আলাদা কোন স্বাদ নেই তাই আমরা ওটসের সাথে মিশিয়ে খেতে পারি।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা/chia seeds benefits in bengali |
চিয়া সিডের উপকারিতাঃ-
চিয়া সিড একটি ছোট বীজ কিন্তু এর উপকারিতার কোন শেষ নেই।চিয়া সিড এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ওমেগা ৩, ফাইবার, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, সালমান, মেটাবলিক সিস্টেম, তাছাড়াও আমাদের শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকে কমায়, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুকি কমায়। এক কথায় বলা যায় চিয়া সিডবহু গুণ বিশিষ্ট।
১) ক্যালসিয়ামঃ আমাদের সকলেরই জানা দুধ এবং ডিমে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা আমাদের হাড় এবং দাঁতকে মজবুত করতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের হাড় ক্ষয় রোগ থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। চিয়া সিডএ দুধ এবং ডিমের চেয়েও প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে। যা আজও আমাদের অনেকেরই না জানা। তাই নির্ভয়ে আমরা চিয়া সিড যে কোন খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারি। চিয়া সিড খেলে আমাদের শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হবে।
২) ওমেগা -৩ঃচিয়া সিডএ থাকা ওমেগা ৩ দেহের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলকে কমায় এবং এর পাশাপাশি হৃদরোগের ঝুকি কমায়।
৩) ফাইবারঃচিয়া সিডএ আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা খাবার হজম করতে সাহায্য করে।
৪) প্রোটিনঃআমরা সকলেই জানি দুধ এবং ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। কিন্তু এটা জানা নেই যে চিয়া সিডএ আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা দুধ এবং ডিমের চেয়েও অনেকটা বেশি তাই আমরা নির্ভয়ে চিয়া সিড খেতে পারি।
৫) অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃ আমরা সকলেই জানি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ায়। চিয়া সিড এ আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
৬) ব্লাড সুগারঃ চিয়া সিড খেলে ব্লাডে সুগারের পরিমাণ কমে যায় যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে।
৭) স্যালমনঃ আমরা জানি সাধারণত মাছে সালমান থাকে। কিন্তু অনেকেই জানিনা মাছের চেয়ে অনেক বেশি সালমান থাকে চিয়া সিডএ । যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী তাই অনায়াসেই আমরা চিয়া সিড খেতে পারি।
৮) কষ্ট কাঠিন্যঃ- চিয়া সিড খেলে কষ্ট কাঠিন্য রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আমরা ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য এক গ্লাস পানির সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে খেতে পারি।
৯) ত্বকঃ চিয়া সিড ব্যবহারের ফলে ত্বক সুন্দর হয়।
১০) চুলঃ চিয়া সিড ব্যবহারে চুল ঘন মজবুত হয়।
১১) নখঃচিয়া সিড খেলে নখ সুন্দর হয়।
১২)মেটাবলিক সিস্টেমঃ- চিয়া সিড মানুষের শরীরের মেটাবলিক সিস্টেমকে বাড়িয়ে তোলে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
১৩) ক্যান্সারঃ-চিয়া সিড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
১৪) এসিডিটিঃ- চিয়া সিড খেলে এসিডিটি সমস্যা থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়। এবং শরীরকে সুস্থ রাখে ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে।
১৫) ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডঃ- ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্ককে সুস্থ করে পুনরায় কার্যকরী ক্ষমতা বাড়ায়। চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি তাই আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য চিয়া সিড খেতে পারি ।তাছাড়া হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরলকে দূর করে।
চিয়া সিডের অপকারিতাঃ-
প্রত্যেকটা খাবারেরই ভালোর পাশাপাশি কিছু খারাপ দিক থাকে। ঠিক তেমনি চিয়া সিড যেমন বহু গুণ বিশিষ্ট ঠিক তেমনি এর কিছু ক্ষতিকারক বিষয় আছে। চিয়া সিড এর ক্ষতিকর বিষয়গুলো অবশ্যই আমাদের জেনে রাখা উচিত না হলে মাত্রা বিহীন খেলে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। যেমনঃ
১)মাত্রাবিহীন চিয়া সিড খেলে আমাদের শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।তার ভিতরে অন্যতম হলো স্তন ক্যান্সার হতে পারে।
২) এ আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার তাই চিয়া সিড কম করে খেতে হয়। চিয়া সিড বেশি পরিমাণ খেলে পেটে ব্যথা থেকে শুরু করে ডায়রিয়া সমস্যা হতে পারে। তাই সবকিছু নিয়ম মেনে খাওয়া উচিত।
৩)চিয়া সিড খেলে ওজন কমে কিন্তু চিয়া সিড অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে এবং শরীর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই চিয়া সিড অবশ্যই যেন পরিমাণ করে খাওয়া হয়।
৪)চিয়া সিড খেলে আমাদের শরীরের রক্তের চাপ কমিয়ে হাই প্রেসার থেকে মুক্তি দেয়।
কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণ চিয়া সিড খেলে রক্তের চাপ কমে গিয়ে প্রেসার লো হয়ে আমরা অসুস্থ হয়ে যেতে পারি তাই চিয়া সিড খাওয়ার সময় অবশ্যই যেন নিয়ম মেনে খাওয়া হয়।
৫) চিয়া সিড বেশি পরিমাণ খেলে বমি বমি ভাব হতে পারে এমনকি বমি হয়ে যেতেও পারে।
৬) চিয়া সিড বেশি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর ফুলে যেতে পারে।
৭) চিয়া সিড বেশি খাওয়ার ফলে এলার্জি সমস্যা হতে পারে।
৮) যাদের শরীরে এলার্জি সমস্যা বেশি আছে তারা চিয়া সিড খেলে জিব্বা এবং ঠোঁট চুলকাতে পারে।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা/chia seeds benefits in bengali |
Read More>>ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়
পৃথিবীতে সকল খাদ্যেরই আলাদা আলাদা পুষ্টিগুণ রয়েছে। এদের মধ্যে কোনটিতে বেশি পুষ্টি আবার কোনটিতে কম পুষ্টি রয়েছে। যে খাদ্যে বেশি পুষ্টি রয়েছে সেটি বেশি পরিমাণ গ্রহণ করা শরীরের জন্য উপকারী এই ভ্রান্ত ধারণা বাদ দিতে হবে।সকল খাদ্যই পুষ্টিগুণ ও পুষ্টির পরিমাপ অনুযায়ী পরিমাণ মতো গ্রহণ করতে হবে। তাই শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য আমাদের সুষম খাদ্যগুলো বাছাই করতে হবে শরীরের অতিরিক্ত ওজন বা কম ওজন জনিত সমস্যা দূর করার জন্য আমরা একটি সুষম ডায়েট চার্ট ফলো করতে পারি।
0 মন্তব্যসমূহ